জায়গাটার নাম ভালুকপং, চীন আক্রমণের পরে এই জায়গা থেকে উত্তরে বমডিলার দিকে উপদিষ্ট প্রণালী-মাফিক আধুনিক রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছিল। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে উপলবিক্ষতা জিয়া ভরেলী নদী। আমার থাকার তাঁবুটি নদীর প্রায় দশ ফিট উপরে এক প্রশস্ত সমতলভূমির এক প্রান্তে— ঝুঁকে তাকালে নীচে নদীর জলোচ্ছ্বাস দেখা যায়।
পরদিন কাক-ভোরে ঘুম ভেঙে তাবুর এক চিলতে জানালার ফ্রেমে বাঁধানো আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ জুড়িয়ে গেল। সারারাত বৃষ্টিস্নাত নির্মল ঘন নীল আকাশের এখানে-সেখানে পেঁজা তুলোর মতো এক এক টুকরো হালকা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে, কখনও ঘন সবুজে আচ্ছন্ন উঁচু পাহাড়ের নাগালের মধ্যে অবিশ্রান্ত কলস্বরে ভরেলী তার অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। সুরের সেই মূর্ছনা দিক-দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ে নীল আকাশে পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘের রাজ্যে তরঙ্গ তুলছে। এমন একটি অনির্বচনীয় মুহূর্তে তাঁবুর মধ্যে বিছানা আঁকড়ে পড়ে থাকা যায় না। বেরিয়ে এলাম।
জিয়া ভরেলী সত্যি জিইয়ে উঠেছে, উথলে উঠেছে। ওর পান্নার রঙে গেরুয়ার ছোপ লেগেছে। কালকের বৃষ্টির ফল। বিভিন্ন আয়তন ও অবয়বের শিলারাশি যুগ যুগ ধরে গড়িয়ে গড়িয়ে আদিরূপ ফেলেছে হারিয়ে। এখন সবই প্রায় গোলাকার— বিশাল শক্তির চাপে পড়ে নিজস্বতা, স্বকীয়তা এবং বৈশিষ্ট্য হারিয়ে সকলের সঙ্গে এক রূপ নিয়েছে। এই সব শিলা রাশির উপর দিয়ে চঞ্চল গতিতে লাফিয়ে, কখনও প্রখর বেগে ভরেলীর জল বয়ে চলেছে। শীতে পান্নার রঙ-জলের আর বনানীর রঙ একাকার হয়ে যায়। বর্ষায় ভোল যায় পালটে, রঙ আর অবয়ব দুটোই। নদীর পারে ঘন জঙ্গলের মধ্যে দৃষ্টি বেশি দূর প্রবেশ করতে পারে না। অজানা রহস্যের ইঙ্গিত দিয়ে থেমে যায়।
Customers' review
Reviews
Be the first to review ""