₹416 ₹520
20% off
Author: Sakyajit Bhattacharya
Publisher: Suprokash
Language: Bengali
Binding: Hardbound
দার্জিলিং-এর বর্ষাকালকে যদি এক কথায় ব্যাখ্যা করতে হয়, তাহলে তার নাম হবে অবিশ্রাম। বিরতিহীন বৃষ্টি। কখনও আস্তে এবং কখনও মুষলধারে। যখন বৃষ্টির বেগ কম, পাহাড়ের নীচ থেকে মেঘের দল উঠে এসে কুয়াশায় ঢেকে দিচ্ছে চরাচর। আমার ঘরের জানালার কাচ ভেপে উঠছে। রাস্তাঘাটের স্যাঁতসেঁতে ভেজা অন্ধকার ভেদ করে মাঝে মাঝে ছিটকে আসছে একঝলক ছাতার রং অথবা বাহারি পোশাকের আঘ্রাণ। কম সংখ্যায় টুরিস্ট। ম্যাল, চৌরাস্তা, কেভেন্টার্সের ছাদ, সমস্তই ফাঁকা ফাঁকা। সন্ধ্যা হলে একদম নিঃঝুম হয়ে যায়। ছোটোখাটো হোটেলগুলো পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলেছে আগামী এক মাসের জন্য। সমতলে যাবার জিপগাড়িরা পলিথিনে সর্বাঙ্গ মুড়ি দিয়ে আপাতত বর্ষাঘুমে। ঘরের দেয়াল ঘেমে ওঠে। আড্ডা জমায় অদ্ভুত দেখতে পাহাড়ি পোকার দল। খাদের ধারের পাইন, ইউক্যালিপটাস, বার্চের ডাল থেকে সারাদিন টুপটাপ করে জল পড়বার আওয়াজ। ক্ষণিকের জন্য কুয়াশা কেটে গেলে আবছা জলরঙের মতো দেখা যায় নীচের দরিদ্র বস্তি। এই অবিরাম অবসাদের মতো বৃষ্টি মনকেও কীরকম বিকল করে দেয়। কাজ করতে ভালোলাগে না। সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।মনে হয় জানালার বাইরে ওই ছাইরঙা আকাশ আর ফ্যাকাশে জন্ডিস রুগির মতো সূর্যের আলোকে চেটে দেখি । এমনিতেই অনিদ্রাতে ভুগি। দিনের বেলা ঘুম পায়, চোখের পাতা বুজে আসে। এমন প্রকৃতি আমাকে আরোই বেশি করে কাজে ফাঁকি দেওয়াবার ষড়যন্ত্র করেছে।
১৯০৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতার ইংলিশম্যান কাগজে একটা লেখায় বলা হয়েছিল, ‘দার্জিলিঙ হ্যাজ অলমোস্ট বিকাম দ্য প্লে-গ্রাউড অ্যান্ড নার্সারি অফ ক্যালকাটা’। স্বাভাবিক! সাম্রাজ্যবাদের চোখে দার্জিলিং-এর নিজের মূল্য কতটুকু, যদি না তা রাজধানীকে সার্ভ করে! কলকাতার নার্সারি হওয়াই এই শহরের ভবিতব্য ছিল হয়তো, যার তলায় চাপা পড়ে গিয়েছিল অসংখ্য নেটিভ কুলি, চা বাগানের শ্রমিক, লেপচা নেপালি ভুটানি গোষ্ঠীদের আত্মপরিচয়ের আকাঙ্ক্ষা। এই বৃষ্টি, অবিরাম স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া আর অবিচ্ছিন্ন কুয়াশা দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, এটাই সম্ভবত আসল দার্জিলিং, যার পেটের ভেতর লুকিয়ে থাকা রহস্যগুলোর সুলুকসন্ধান কোনোদিনই উপনিবেশের প্রভুরা নাগাল পাবে না। কাঞ্চনজঙ্ঘা, টাইগার হিলের সূর্যোদয়, অজস্র ফুলের সমারোহ, চিড়িয়াখানা, এসব পেরিয়ে গেলে যেটা পড়ে থাকে—চিতাবাঘের মতো ঘাপটি মেরে থাকা সেই শহরের ইতিহাস এবং অস্তিত্বকে সম্ভবত অমিতাভ মিত্রর মতোই ভুলে গিয়েছে সবাই। অথবা, ভুলে গেছে কি? মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব থেকে যায়। অমিতাভ কি বিশ্বাস করতেন?
শেষ মৃত পাখি
শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য
Author: Sakyajit Bhattacharya
Publisher: Suprokash
Language: Bengali
Binding: Hardbound
দার্জিলিং-এর বর্ষাকালকে যদি এক কথায় ব্যাখ্যা করতে হয়, তাহলে তার নাম হবে অবিশ্রাম। বিরতিহীন বৃষ্টি। কখনও আস্তে এবং কখনও মুষলধারে। যখন বৃষ্টির বেগ কম, পাহাড়ের নীচ থেকে মেঘের দল উঠে এসে কুয়াশায় ঢেকে দিচ্ছে চরাচর। আমার ঘরের জানালার কাচ ভেপে উঠছে। রাস্তাঘাটের স্যাঁতসেঁতে ভেজা অন্ধকার ভেদ করে মাঝে মাঝে ছিটকে আসছে একঝলক ছাতার রং অথবা বাহারি পোশাকের আঘ্রাণ। কম সংখ্যায় টুরিস্ট। ম্যাল, চৌরাস্তা, কেভেন্টার্সের ছাদ, সমস্তই ফাঁকা ফাঁকা। সন্ধ্যা হলে একদম নিঃঝুম হয়ে যায়। ছোটোখাটো হোটেলগুলো পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলেছে আগামী এক মাসের জন্য। সমতলে যাবার জিপগাড়িরা পলিথিনে সর্বাঙ্গ মুড়ি দিয়ে আপাতত বর্ষাঘুমে। ঘরের দেয়াল ঘেমে ওঠে। আড্ডা জমায় অদ্ভুত দেখতে পাহাড়ি পোকার দল। খাদের ধারের পাইন, ইউক্যালিপটাস, বার্চের ডাল থেকে সারাদিন টুপটাপ করে জল পড়বার আওয়াজ। ক্ষণিকের জন্য কুয়াশা কেটে গেলে আবছা জলরঙের মতো দেখা যায় নীচের দরিদ্র বস্তি। এই অবিরাম অবসাদের মতো বৃষ্টি মনকেও কীরকম বিকল করে দেয়। কাজ করতে ভালোলাগে না। সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।মনে হয় জানালার বাইরে ওই ছাইরঙা আকাশ আর ফ্যাকাশে জন্ডিস রুগির মতো সূর্যের আলোকে চেটে দেখি । এমনিতেই অনিদ্রাতে ভুগি। দিনের বেলা ঘুম পায়, চোখের পাতা বুজে আসে। এমন প্রকৃতি আমাকে আরোই বেশি করে কাজে ফাঁকি দেওয়াবার ষড়যন্ত্র করেছে।
১৯০৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতার ইংলিশম্যান কাগজে একটা লেখায় বলা হয়েছিল, ‘দার্জিলিঙ হ্যাজ অলমোস্ট বিকাম দ্য প্লে-গ্রাউড অ্যান্ড নার্সারি অফ ক্যালকাটা’। স্বাভাবিক! সাম্রাজ্যবাদের চোখে দার্জিলিং-এর নিজের মূল্য কতটুকু, যদি না তা রাজধানীকে সার্ভ করে! কলকাতার নার্সারি হওয়াই এই শহরের ভবিতব্য ছিল হয়তো, যার তলায় চাপা পড়ে গিয়েছিল অসংখ্য নেটিভ কুলি, চা বাগানের শ্রমিক, লেপচা নেপালি ভুটানি গোষ্ঠীদের আত্মপরিচয়ের আকাঙ্ক্ষা। এই বৃষ্টি, অবিরাম স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া আর অবিচ্ছিন্ন কুয়াশা দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, এটাই সম্ভবত আসল দার্জিলিং, যার পেটের ভেতর লুকিয়ে থাকা রহস্যগুলোর সুলুকসন্ধান কোনোদিনই উপনিবেশের প্রভুরা নাগাল পাবে না। কাঞ্চনজঙ্ঘা, টাইগার হিলের সূর্যোদয়, অজস্র ফুলের সমারোহ, চিড়িয়াখানা, এসব পেরিয়ে গেলে যেটা পড়ে থাকে—চিতাবাঘের মতো ঘাপটি মেরে থাকা সেই শহরের ইতিহাস এবং অস্তিত্বকে সম্ভবত অমিতাভ মিত্রর মতোই ভুলে গিয়েছে সবাই। অথবা, ভুলে গেছে কি? মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব থেকে যায়। অমিতাভ কি বিশ্বাস করতেন?
শেষ মৃত পাখি
শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য