বড়োদিনের ছুটিতে লেখক ফিরছেন নিজের গ্রামে। সেই শীতের রাতে সমস্ত চরাচরে ছেয়ে থাকা স্তম্ভিত অন্ধকার, রাস্তার দু-পাশে ঝোপঝাড়ে পুঞ্জীভূত জোনাকির আলো, প্যাঁচাসহ রাতচরা পাখিদের ডাক, গাড়োয়ানের কণ্ঠে দু-কলি মেঠোসুরের গান সমারোহে এই নিশিযাত্রাও তো এক উদযাপনের মতো। সমতলের শীত-সকালের গ্রামীণ-রম্যতা, ধূসর কুয়াশার অবগুণ্ঠনে ঢাকা দিগন্তের আহ্বান, শীতকালীন ফসলের ক্ষেতে ঊষালোকে শিশিরবিন্দুতে রূপালি আলোর ছটা, বাচষ্পতিদাদার সযতন পুষ্পচয়ন কিংবা দারুণ শীতের সকালে গ্রাম-বালিকাদের শেফালিকা-সংগ্রহের আবহ, শিউলির মৃদু গন্ধ, আম-কাঁঠালের বাগান, ঘন বন-হলুদের জঙ্গল—সবই তো সেই স্ববিশ্বের সুরভিত জীবনের উৎসবে নিমন্ত্রণ। তারই মাঝে গাছিদের খেজুর রস সংগ্রহ, ক্ষুদ্রকায়া নদীটিকে ঘিরে জীবনের চাঞ্চল্য বা খেজুর রস-প্রস্তুতির মাঝেই বাইনের পাশে জড়ো হয়ে সদ্য-প্রস্তুত খেজুর গুড়ে বালকভোজন, নষ্টচন্দ্রের মিথিক্যাল অনুষঙ্গ, বাজারের বিচিত্র পণ্য ছাপিয়ে বিচিত্রতর মানুষের কলকাকলি — সবই যেন সেই প্রাণপণে বেঁচে থাকার অভীপ্সাসমূহের উল্লসিত, বেদনার্ত, চমকিত এক-একটি উৎসবের দিন আর রাত। রাতগড়িয়ে দুপুর হওয়া মনসার ভাসানের গান শুনে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছিন্ন, গ্রামত্যাগে উদ্যত—সর্বার্থে ব্যর্থ, বিপন্ন, সবহারা মহেশ দাসের থমকে যাওয়া পা-দুটি সেই রবাহূত-মহোৎসবে পাত পেড়ে বসে পড়তে চায়।
সেই আশ্চর্য ভূবিশ্বে, অন্যতর সেই উৎসবের জীবনে দীনেন্দ্রকুমারের পাঠকদের নিত্য নিমন্ত্রণ।
দীনেন্দ্রকুমার রায় লিখিত
সেকালের চিত্র চরিত্র
Customers' review
Reviews
Be the first to review ""