আশ্বিন এখানে কিশোর এবং আকাশ এখনো নয়নাভিরাম নয়। তুষারবিলাসী নির্জন মেঘেদের ছায়া এ অবাধ নীলের চালচিত্রে এখনো সাঁতারে অক্ষম। এই রকম একটি ভোরবেলায় নিজস্ব বাগানের মাটিতে ছড়িয়ে থাকা শিউলি-টগরদের মাংস মাড়াতে মাড়াতে নিত্যপুজোর জবা গাঁদা ও গগনশিরীষ ফুল সংগ্রহে ব্যস্ত নিত্যময়ী দেবী সাধের বেলগাছটির নীচে তাঁর ঊর্ধ্বতন ষষ্ঠ পুরুষ'রামরাম সামন্তর দেখা পেলেন। নিত্যময়ীর ভেজা বস্ত্রে তখনো শিশিরের আলিঙ্গন। গালের থুরথুরে চামড়া সজীব হয়নি। এমনকি শেষরাত্রের দ্রবীভূত বাতাসও যেন বা অদূরের আদিগঙ্গার শৈত্যে কিয়ৎ ম্লান। নিত্যময়ী ভেবেছিলেন এ অন্ধকারের, এ নক্ষত্রনিচয়ের নীচে যে সবুজতা তাকে আরও কিছুটা চাখবেন। যাকে বলে ঘুম হয়ে বসে থাকা এক বাগান গাছ মুখে নিয়ে। কিন্তু সামন্তমশায় তাঁকে আর সে সুযোগ দিলেন না। চরাচরের দিব্যভাব স্থবির থাকল, নিত্যময়ী তাঁর হাত থেকে ফুলের সাজিটির ধপ করে মাটিতে পড়বার শব্দ শুনলেন। বুঝলেন বুক কাঁপছে। এ কম্পন ভয়, আনন্দ বা উত্তেজনার নয়। বরং এর মধ্যে শৈশবের ঘ্রাণ নিহিত। অনামিকা থেকে কাঁপন আস্তে আস্তে উপরে উঠে একসময়ে বুকে ধাক্কা মারবার স্মৃতিটুকু ছেলেবেলা থেকে তাঁর ভেতর এক স্থায়ী ছায়া রূপে যেরকম থাকত, সেটি আবার জীবন্ত হয়ে উঠল, অন্তত এক লহমার জন্য।
Customers' review
Reviews
Be the first to review ""