ডিঙি আবার চলতে শুরু করে। সাগর বিলের শেষ মাথায় এসে জলে নামে। ডিঙিখানা হাত দিয়ে টেনে নিয়ে এসে মাটির ধার ঘেঁষে বাঁধে সে। সাগর বলে, “তুমি অ্যানা বসেক্। ব্যাপারটা মোর দেখা নাগে। ডর নাগবে নাতো?”
রাজেশ্বরী বলে, ‘না।'
সাগর তার থলির ভিতর থেকে একটা টর্চ বের করে হাতে নেয়। ডিঙির খোলের ভেতর থেকে টেন বের করে একখানা লাঠি। মুখে বলে, “বসো তুমি, আমি অ্যানা দেখে আসি।'
শতখানেক হাত দূরে একটা মাত্র গাছ আবছা দেখা যায় মেঘভাঙা জ্যোৎস্নায়। সাগর সেই দিকে এগোয়। জমি এখানে সমতল নয়, অনাবাদী এবং পতিত। সাগর সন্তর্পণে এগোয়। সামান্য এগিয়ে সে বোঝে যারা এখানে ছিল, তারা এখন আর নেই। সে জোরে পা ফেলে। সাগর জানে এখানে একটা বাবলা গাছ আছে। এখন চাঁদ প্রায় মাথার উপরে, তাতেই বাবলা গাছটাকে ঝাপসা দেখায়। বিল থেকে এই গাছটার পিছনে গত পঁচিশ বছরের প্রায় প্রত্যেকটি চাঁদকে সে উঠতে দেখেছে। প্রত্যেকবারেই গাছটাকে, একটা কাঁটাসর্বস্ব ত্রিভঙ্গ গাছকে তার অসামান্য মনে হয়েছে। সর্বদিক থেকে, এমনকি এপাশ থেকে ওপাশে গাছটাকে ভেদ করেও দেখা যায়। অসংখ্য শিরা, উপশিরার মতো ছোটো, বড়ো, মাঝারি ডাল ছড়িয়ে গাছটা দাঁড়িয়ে আছে বহু বছর।
গাছটা থেকে হাত দশেক দূরে এসে সাগর দাঁড়ায়। গাছের গুঁড়িটার সঙ্গে কিছু একটা আটকে আছে। নিশ্চিতই আছে, যাতে জায়গাটাতে ছায়া ঘনতর। সে টর্চ জ্বালে।
সঙ্গে-সঙ্গেই টর্চটা নিবিয়েও ফেলে সাগর। শিউরে উঠে আলোটা যেন নিজের থেকেই নিবে যায়। গাছটার গুঁড়ির সঙ্গে একটা মানুষ বাঁধা আছে! এক ঝলক আলোয় সে পরিষ্কার দেখেনি, তবে যা দেখেছে তাতে ভুলও নেই।
সে আশেপাশে তাকায়।
না, অন্য কেউ কিম্বা অন্য কিছু নেই সেখানে।
সে আরো কয়েক পা এগোয় এবং টর্চ জ্বালে।
তার টর্চের ফোকাস গাছে বাঁধা মানুষটার শরীরের উপর পড়লে সাগরের গলা থেকে একটা চাপা আর্ত চিৎকার ঠিকরে পড়ে। কী বীভৎস!
গাছের সঙ্গে বাঁধা মানুষটার তলপেট থেকে ঝুলে থাকা অন্ত্রে, টর্চের আলোর প্রতিক্রিয়ায় কিনা, কে জানে, একটা আলোড়ন ওঠে। নীল একটা থলি মোচড় দিয়ে উঠেছে।
সাগর আরো কাছে আসে। টর্চ জ্বেলে ভালো করে দেখে। মুখবাঁধা মানুষটার হাত দু'খানা টেনে পিছনে নিয়ে গাছের সঙ্গে বাঁধা! সম্ভবত, ধারালো হেঁসোর একটানে তার অন্ত্র সম্পূর্ণ বাইরে বেরিয়ে এসেছে এবং এখনো জীবিত কোষগুলো সংকুচিত এবং প্রসারিত হয়ে মোচড় দিচ্ছে। দেহটার সমস্ত নিম্নাংশ জুড়ে রক্ত। বাতাসে উষ্ণ রক্তের একটা গা গুলানো আঁশটে ভারী গন্ধ।
মুখের উপর টর্চ ফেলে সাগর এবার নিজের চিৎকারকে আর চেপে রাখতে পারে না। মানুষটা আড়বেঁকির নরেন মালো।
Customers' review
Reviews
Be the first to review ""