জেরি-গ্লোরিয়া-আর্জাগা-টোটো'দের গল্পের শুরু ম্যাকলিং ডুলাগের হাতে। ১৯৭৪ থেকেই চিকো নদীর ওপর চারটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য জমি তদারকি করছিল ন্যাশনাল পাওয়ার কর্পোরেশন। আগের বছরেই স্থানীয়দের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা ছাড়াই সরকারকে চিকো বাঁধের প্রযুক্তিগত সম্ভাব্যতার বিতর্কিত 'রিপোর্ট' দেয় জার্মান কোম্পানি লেমেয়ার ইন্টারন্যাশনাল। এই চারটি বাঁধের মধ্যে ১,৪০০ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চলের আদিবাসী ধানজমি, বাগান এবং পবিত্র কবরখানাকে কেড়ে নেওয়া শুধু চিকো-ফোর বাঁধ দেওয়ার পেছনেই ছিল লাখখানেক আদিবাসী উচ্ছেদের ঠান্ডা মাথার পরিকল্পনা। '৭৪ থেকেই ম্যাকলিং-এর নেতৃত্বে প্রতিরোধ। ১৫০ জন স্থানীয় বোনটোক ও কলিঙ্গ আদিবাসী মিলে একত্রে তৈরি করল বোডং বা পিস ফেডারেশন। সরকার সাময়িক সরলেও '৭৫-এর ডিসেম্বরে নখ দাঁত বের করল আবার। চারটি বাঁধের মধ্যে সাদাঙ্গা অঞ্চলের চিকো-টু ও কলিঙ্গর টিংলায়ানের চিকো-ফোর দখল করতে রাষ্ট্রকর্তৃক তৈরি হল কলিঙ্গ স্পেশাল ডেভেলপমেন্ট রিজিয়ন। ১৯৭২ থেকে ১৯৮১-র সেই কুখ্যাত মার্কোস জমানা এবং মার্শাল ল। বাঁধ এলাকায় 'ফ্রি-ফায়ার জোন' তৈরি করে সেনার হাতে একচ্ছত্র গুলিবর্ষণের নির্দেশনামা। '৭৭-এ ম্যাকলিং সহ আন্দোলনকর্মী-নেতৃত্বদের জেল, যদিও বেরিয়ে এসেই তাঁদের সোচ্চার প্রতিরোধে '৭৮ ও '৭৯-র দু'দুটো বোডং পিস ফেডারেশন। হাজার দুয়েক কলিঙ্গ-বোনটকের যুগপৎ মুষ্টি, চিৎকার। নেতৃত্বে ম্যাকলিং। আপসহীন ম্যাকলিং, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান-বিরোধী গেরিলা ফিলিপিনোদের সঙ্গে কুলি হিসেবে থাকা পঞ্চাশ ছুঁতে চলা ম্যাকলিং ডুলাগের কলিঙ্গদের বুগনাই গ্রামে নিজের বাড়িতে এক শান্ত রাত দশটায় ১৯৮০-র ২৪ এপ্রিল আকস্মিক র ক্তক্ষয়। দরজার ফাঁক দিয়ে দশ দশটা গুলি। ম্যাকলিং ঝাঁজরা হয়ে গেলেও কোনওক্রমে বাঁচেন আরেক পরিবেশকর্মী পেদ্রো ডুঙ্গক সিনিয়র। ম্যাকলিংয়ের র ক্তের দামে, তুমুল বিতর্কে প্রোজেক্ট থেকে হাত তুলে নেয় বিশ্বব্যাঙ্ক। এবং একটা সময়ে হেরে যায় রাষ্ট্র। ম্যাকলিং চলে গেলেও চিকো নদীর বুকে আঁচড় পড়েনি আর...।
এক শাসক থেকে অন্য শাসক, ক্রমাগত চলা চোরাগোপ্তা বা রাষ্ট্রকর্তৃক পরিবেশকর্মী-হ ত্যা, গুম খু ন, কমিউনিস্ট ভীতি, কর্পোরেট আঁতাত— দেশের রাজনৈতিক র ক্তক্ষয়ের সঙ্গে পরিবেশ-আন্দোলন মিলেমিশে তোলপাড়। '৭২ থেকে '৮১- র কুখ্যাত মার্শাল ল— পরিণতি অসংখ্য রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত হ ত্যা, শারীরিক অ ত্যাচার, গুম খু ন এবং নির্বিচারে গ্রেপ্তারি। এবং এসবের সঙ্গেই জমি অধিকার রক্ষা, নির্ভীক সাংবাদিকতা, অথবা কর্পোরেট-প্রেমী রাষ্ট্রের পরিবেশ-লোপাট আটকাতে জোরদার পরিবেশ-আন্দোলন—ফিলিপিন্সে পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে এভাবেই মিশে আছে পরিবেশকর্মী-হ ত্যার ভয়ঙ্করতম দিকগুলো। সঙ্গে আছে ফিলিপিন্সকে ক্রমাগত অ স্ত্র-প্রশিক্ষণ ও অ স্ত্র-জোগান দেওয়ার নিয়মিত মার্কিন অর্থানুকূল্যে যোগসাজশ। ২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত প্রায় ৩,৫০০ ফিলিপিনো মিলিটারি মার্কিন আর্থিক সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ পেয়ে এসেছে, ২০১৫ থেকে ২০২২-এ ফিলিপিন্সে অ স্ত্র প্রশিক্ষণ ও অ স্ত্রের জোগানে মোট মার্কিন লগ্নি ১.১৪ বিলিয়ন ডলারের ওপর। এ এক আশ্চর্য সমাপতন। সঙ্গে আছে কু খ্যাত 'রেড টাগিং' বা কমিউনিস্ট-নিধনের পুঁজিবাদী ইতিহাস। কমিউনিস্ট 'নিউ পিপলস আর্মি' (এনপিএ)-র সদস্য হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে অধিকাংশ পরিবেশকর্মীকে। পিএনএনআই, কালিকাসান পিএনই কিংবা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল কনসার্নস— একের পর এক সংস্থার ওপর দেশের একাধিক পরিবেশঘাতক প্রোজেক্টের বিরোধিতা করায় সম্পূর্ণ বিজাতীয় অন্য এক অভিযোগে দোষী চিহ্নিত করে নেমে এসেছে পু লি শি অভিযান। রেড ট্যাগিং-এ চিহ্নিত হয়েছেন ২০১৯-এর খোদ ইউএন স্পেশাল র্যাপোর্টের ভিক্টোরিয়া টাউলি-কর্পাজ। পাশাপাশি পরিবেশকর্মীদের ওপর প্রত্যক্ষ শারীরিক আ ক্রম ণ ও হ ত্যা চলছেই। উত্তর ফিলিপিন্সের লুজন দ্বীপের কর্ডিলেরা পাহাড়ের ধানের ক্ষেত। বহুজাতিকের দাপট এবং একের পর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রস্তাব। এই কর্ডিলেরা পার্বত্য অঞ্চলেই ইফুগাও পিস্যান্ট মুভমেন্ট (আইপিএম)-এর কর্মীদের ল ড়া ই। ইবুলাও ও আলিমিট নদীর গতিপথকে ব্যাহত করা আলিমিট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প কাজ শুরু করেছিল ২০১৫ সালে এবং তখন থেকেই প্রতিরোধী আইপিএম। এসএন অ্যাবোইটিজ পাওয়ার কোম্পানির মালিকানায় নরওয়ে-ফিলিপিনো আঁতাতের এই প্রোজেক্টের বিরুদ্ধে সোচ্চার আইপিএম-এর সদস্যরা ২০১৫-র এপ্রিলে হু ম কি চিঠি পেলেন, লেখা—'গ্রে মে, জুন গ্লুম, নো স্কাই জুলাই'।
Customers' review
Reviews
Be the first to review ""