খলপা-গোলপাতার কুটিরের আগচালায় একটি মাইজ কলাপাতার ওপর শয়ান লখা তাঁতির নিথর দেহ। ভোরে বহুক্ষণ ধরে লখার নাকে ধুনোর ধোঁয়া দিয়ে, সাপের বিষঝাড়ার মন্ত্র পড়ে, অনেক ঝাড়ফুঁক করেও খরিশ-কেউটের প্রাণঘাতী বিষ লখার শরীর থেকে নামাতে ব্যর্থ হয়ে কিছুক্ষণ আগে হতাশ হয়ে ফিরে গেছে ওঝা।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আঙিনায় বাড়ছে গ্রামবাসীদের জমায়েত। লখার মৃতদেহের পাশে বসে মাথা চাপড়ে বিলাপ করছে লখার মা। কয়েকজন প্রতিবাসিনী তাকে সান্ত্বনা দিয়ে চলেছে। একজন বৃদ্ধা চোখ মুছতে মুছতে একটা রঙচটা গামছা দিয়ে ঘষে ঘষে মৃতদেহের ভেজা গোড়ালি থেকে জলকাদা মুছছে। আঙিনার বাইরে গ্রামবাসীরা প্রথা-নিয়ম এসব নিয়ে অনুচ্চস্বরে অনেক জল্পনা-কল্পনা-কথাবার্তা বলে চলেছে। লখা তাঁতির অষ্টাদশ বর্ষীয়া স্ত্রীকে লখার চিতায় সহমরণ করাবার জন্য লোকবল এবং অনেক আলোচনা তো দরকারই।
চালাঘরের ভিতরে লখার বৌকে ঘিরে গ্রামের মেয়ে-বৌদের ভিড়। উচ্চৈঃস্বরে কেঁদে তারা তাকে সমবেদনা জানিয়ে যাচ্ছে। আবার এরই মাঝে কেউ লখার বৌয়ের হাতের মুঠোয় কিছু কড়ি গুঁজে দিয়ে আবার ওর মুঠো খুলে সেই কড়ি নিজেদের আঁচলে বেঁধে নিচ্ছে। বাচ্চার কোমরের ঘুনসিতে সতীর কড়ি বেঁধে রাখলে নাকি তাকে যম স্পর্শ করতে পারে না। লখার বৌ বেহুলা ভয়ে সন্ত্রস্ত। কান্না থামিয়ে এবার সে বিড়বিড় করে ঠাকুরের কাছে কাতর প্রার্থনা করল ঠাকুর আমায় বাঁচাও! আমার বড় ভয় করছে। আমি মরতে চাই না। ঠাকুর রক্ষা কর। তোমার থানে যে মাথা ঠুকব শরীর খারাপের জন্য তাও পারছি না ঠাকুর।
বেহুলার গঙ্গাজল সই মৌন হয়ে সধবা বেহুলার পায়ে শেষবারের মতো আলতা পরাচ্ছিল। কথাগুলো কানে যেতেই সে থেমে গেল। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে পুরোহিতের কানের কাছে গিয়ে অতি নিম্নকণ্ঠে কিছু বলল। তা শুনে লখার মৃতদেহের নাকে তুলো গুঁজে দিতে দিতে চিত্ত পুরোহিতের কপালে চিন্তার ভাঁজ। পুরোহিত হঠাৎ থেমে গেল। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে কাঁধ থেকে নেমে আসা উড়ানি তুলে তার দেহ পুনরায় আবৃত করে ভারিক্কি চালে বলল-'রজস্বলায়াতীয়েহহ্নি ভর্তীর মৃতে তৎসহ গমনায় এক রাত্র মাত্র মপি মৃত পতি স্থাপয়েৎ।'
Customers' review
Reviews
Be the first to review ""