শীতের দুপুর। ঝোপে ঝোপে পাখি লাফায়, ডেকে ওঠে কখনও কখনও। বালকের সাইকেল চালনা দেখবে বলেই তারা অপেক্ষা করছে বলে মনে হয়। তার ডান হাতের বগল চেপে ধরে সেন র্যালের সিট। বাহু নিচু হয়ে এগিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে সাইকেলের রড। এবার ডান প্যাডেল উঁচু করে রেখে ডান পায়ের পাতা রাখে তার উপর। বাঁ হাত হ্যান্ডেলে, বাঁ পা মাটিতে। ডান পা প্যাডেলে চাপ দিতেই গড়িয়ে যায় সাইকেলের চাকা। তার সঙ্গে তাল রেখে বাঁ পা মাটিতেই লাফ দিয়ে দিয়ে এগোতে থাকে। ডান প্যাডেল নীচে নেমে এলে চাকা থামে। ডান পায়ের পাতা প্যাডেলের নীচে চাপ দিয়ে আবার তাকে ওপরে ওঠায়। পায়ের চাপে চাকা গড়ায়। এবার একটু জোরে আর বাঁ পা বাঁ প্যাডেলে ওঠার চেষ্টা করে। টলমল করে ওঠে হ্যান্ডেল, চাকা আর বালকের শরীর। উল্টে পড়তে গিয়ে দুই পা মাটিতে নামিয়ে সামাল দেয় বালক। টানা তিন দিন চলে দাদার অজান্তে গতির উপর ভর করে সাইকেল ও শরীরের ভরকেন্দ্রটিকে আয়ত্তে আনার চেষ্টা। শিয়াকুলের ঝোপে সাইকেল সহ উল্টে পড়ে হাতেপায়ে কাঁটার আঁচড়, সাইকেলের শরীরে মাটির দাগ, তবু যখন মাটি থেকে পা তুলে হ্যান্ডেলকে বশ মানিয়ে কিছুটা সময় ছুটে চলে বালক, দুটো অদৃশ্য ডানা গজায় মনে। তিন দিনের দিন হ্যান্ডেল আর রডে হাত, দুই প্যাডেলে পা – হাওয়া কেটে চলতে থাকে সেনর্যালে বনভূমির আঁকাবাঁকা বেপথ দিয়ে। এক অলৌকিক অনুভব বালকের সত্তা জুড়ে। সেদিন রাতের স্বপ্নে রেললাইনের উপর দিয়ে সে সাইকেল চালিয়ে পাড়ি দেয় তার ফেলে আসা গ্রামটির উদ্দেশে। দুর্গাপুরের বেঁটে বন এক নিমেষেই হয়ে যায় ভালুকখুন্যার জঙ্গল। পরদিন সকালে উঠেই নিজেকে কেমন নতুন নতুন মনে হয়। হলোই বা হাফ, জীবনের প্যাডেল এসে গেছে তার আয়ত্তে।
Customers' review
Reviews
Be the first to review ""