বাংলার ডাকাতদের ইতিবৃত্ত নিয়ে এই প্রথম এমন বই। যেখানে অন্ধকার যুগের শাসকের শাসনকালের নানা ইতিহাস, তাঁদের পরিচিতি এবং তাঁদের বংশধরদের নানান খবরাখবর। ডাকাতদের পাশাপাশি ঠগী, ফাঁসুড়ে, ঠগদের ইতিহাসকেও তুলে ধরা হয়েছে এই বইয়ের পাতায় পাতায়।ডাকাতদের গ্রাম, তাদের হত্যালীলার সঙ্গে সঙ্গে ডাকাতদের তৈরি নানান উন্নয়ণের ইতিবৃত্তকেও তুলে ধরা হয়েছে। দস্যুবৃত্তি চিরকালই ছিল, সভ্য সমাজের অন্তরালে। সে সময়ে ভারত বর্ষের আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ছিল পিণ্ডারী, ধুতুরিয়া ও স্মাকফানসা ঠগের মতো দস্যুর দল। সে সময় বাংলা এবং বিহার অঞ্চলে ছিল ঠগীদের আক্রমণ বেশি। ঠগীরা নিছক লুটের ষড়যন্ত্র করে, আড়াল থেকে পাবড়া ছুঁড়ে পথ চলতি পথিককে মাটিতে ফেলে, লাঠি পেটা করে হত্যা করতো। অনেক সময় এই হত্যা করতো পরিকল্পিত স্থানে নিয়ে গিয়ে। সেই হত্যার পরে দেহকে পুকুরের পাঁকে পুঁতে ফেলতো, দেহ করতো লুটপাট।
১৮৩৭ এ বর্ধমানের টাউনহল পাড়ার পুকুরটি থেকে বহু মানুষের কঙ্কাল উদ্ধার হয়। এ থেকেই জানা যায়, এই কঙ্কাল গুলি ঠগীরা গুপ্ত হত্যা করে পুঁতে ছিল। ঘোড়দৌড় চটি এলাকাতে এমন পুকুরের জলে হত্যার গল্পো শোনা যায়। সেই হত্যাকারীদের দমন করতে, যিনি শাসকের হয়ে এলেন, তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মেজর জেনারেল উইলিয়াম হেনরি শ্লীম্যান (১৭৮৮-১৮৫৬)। তাঁর প্রতি ভারতবাসী ঠগীদের দমনের জন্য, আবেগের সঙ্গে মধ্যপ্রদেশের একটি জনপদের নাম রাখা হয় "শ্লীমানাবাদ।" তার কাছেই একটি মন্দিরে তাঁর নামে আজও প্রদীপ জ্বালানো হয়। ১৮১৫, উইলিয়াম হেনরি শ্লীম্যান সে সময় কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের তরুণ। সে সময় লাইব্রেরিতে নানা বই পড়তে গিয়ে চোখে পরে সপ্তদশ শতাব্দীর ফরাসি পর্যটক উদ্ভিদতত্ত্ববিদ জঁ দ্য থিভেনটের মন্তব্য। তিনি লিখেছেন, পৃথিবীর অদ্ভুত ধূর্ত ডাকাত দলের কথা, যারা ফাঁস ছুঁড়ে বহু মানুষকে হত্যা করেছে। এরপরে শ্লীম্যান শুরু করেন সেই দস্যু দলের খোঁজ করতে, নানা অনুসন্ধান। ১৮৩৬ সালে তিনি মাদ্রাজের ফোর্ট সেণ্ট জর্জের সার্জেন ডাঃ শেরউড তাঁর রিপোর্টে ফান্সিগির, আরিতুলুকর, তান্তকেলের বা ওয়াদুল নামে বিচিত্র খুন সম্প্রদায়ের সমন্ধে লিখেছেন। শ্লীম্যান পড়ে পেলেন দিশা। সে সময় শ্লীম্যানকে সাহায্য করেছে, লর্ড উইলিয়াম বেণ্টিঙ্কসহ সহায়তা করেছে একদল তরুণ অফিসার। ডাঃ শেরউডের লেখা থেকে জেনেছেন, 'রামসিনা' ভাষার কথা, এবং এই ভাষাতেই একদিন ঠগীদের দলে পৌঁছে যাওয়া। প্রথম লেখাটি জনৈক এইচ এর পত্র। পত্রটি তাঁর ডায়েরির অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ফ্যানি পার্কস। ১৮৫৪ প্রকাশিত তাঁর বইয়ের নামঃ "ওয়াণ্ডারিংস অব এ পিলগ্রিম ইন সার্চ অব দ্য পিকচারস্কে।"
১৮৩০ অক্টোবর, অ্যাকটিং ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ এস ঠগীদের বিচার করেন। ঠগীরা সে সময় ডাইস ফেলে দিনটি দেখে, তবে বেরুতো হত্যায়। অমরপত্তম হলো জব্বলপুরের ১০০ মাইল পূর্বে, ঠগীরা এখানে ভোপাল রাজ্যে হত্যাকাণ্ডে সাহায্য করে ছিল। এক স্থানের ঠগীরা, অন্য দূরের ঠগীদের ডেরাতে গিয়ে সাহায্য করতো। ঠগী দলের ফাঁসুড়ে বেশি ভাগ পেত লুটপাটের ধনের। বুন্দেলখণ্ড, সিন্ধিয়া এবং হোলকারের রাজ্যে ঠগী ট্যাভারনে সময় কাটানো ইংলিশ জেন্টেলম্যানস। "দি ইণ্ডিয়ান গেজেট" এবং "আগরা আখবর", ১০ অক্টোবর, ১৮৩২ এ বহু ঠগীর বিবরণ পাওয়া যায়। ৬০-৭০ দশকের শেষেও বাংলার পথেপথে ছিল ডাকাতির ভয়। নানা কৌশলে তারা করতো ডাকাতি। সে সব তথ্য খুঁজতে লেখক বাংলার জেলায় জেলায় ঘুরেছেন। গেছেন ডাকাতিয়াদের গ্রামে গ্রামে। এপ্রজন্মের ডাকাত পরিবার গুলোর থেকে জেনেছেন বংশগৌরবের কথা। সম্পূর্ণ ক্ষেত্রসমীক্ষা নির্ভর গবেষণাধর্মী বই "বাংলার ডাকাতনামা " বাংলার ডাকাতদের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসভূমি।
Customers' review
Reviews
Be the first to review ""